বুর্জ খলিফা হলো বর্তমান পৃথিবীতে মনুষ্য নির্মিত সবচেয়ে উঁচু অবকাঠামো। এখন পর্যন্ত ইতিহাসের এটি একটি এক অনন্য অর্জন। বুর্জ খলিফা চালু হয়েছে ২০১০ সালে পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত কোনো দালান বা কোনো উপস্থাপনা বুর্জ খলিফার উচ্চতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। দুবাইয়ের শাসকেরা মানুষের এবং পৃথিবীর সকল উপস্থাপনার থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তৈরি করেছে সবচেয়ে দামি এবং সুন্দরতম বিল্ডিং বুর্জ খলিফা।
বুর্জ খলিফার বৈশিষ্ট্য:
১৬৩ তলা বিশিষ্ট এই বিল্ডিং। যার নিচতলা এবং সর্বোচ্চ তলার মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য ১০° ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই ভবনে আছে নামি দামী সকল হোটেল, রেস্টুরেন্ট, আবাসিক এপার্টমেন্ট, অফিস স্পেস, যোগাযোগ ও সম্প্রসার কেন্দ্র এবং সকল পর্যটক দের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় বুর্জ খলিফা পর্যবেক্ষণ ডেক। এই এই পর্যবেক্ষণ ডেক থেকে দেখতে পাবে চারিদিকে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এমনকি শহরের ৯৫ কিলোমিটার দূর থেকেও বুর্জ খলিফা সর্বোচ্চ বিন্দু দেখা যায়। এই ভবনে আছে তিনটি আলাদা প্রবেশ পথ। একটি হলো আবাসিক ফ্লোর এর জন্য, দ্বিতীয়টি হলো হোটেলে যাওয়ার জন্য,আর তৃতীয় টি অফিস এর জন্য।
এই বিল্ডিং এর ভেতরে আছে ১০০০ টির বেশি বিলাস বহুল আবাসিক এপার্টমেন্ট। ৪৩ তলা এবং ৭৬ তলায় আছে আকর্ষণীয় সুইমিং পুল। বুর্জ খলিফায় সকল আবাসিক এপার্টমেন্ট এর ভেতর থেকে সবচাইতে দামি এবং বিলাস বহুল কক্ষ আছে ১০৭ টি।
আপনি যদি বুর্জ খলিফার সর্বোচ্চ তলায় থাকেন বর্ষার সময় মেঘ আপনি উপর থেকে দেখতে পাবেন। এরকমি আরো অনেক বিষয় আছে বুর্জ খলিফা সম্পর্কে।
কি ভাবে তৈরি হলো এই বুর্জ খলিফা এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিই চলুন:
বুর্জ খলিফা এই বিল্ডিং এর কাজ শুরু হয় ২০০৪ সালে জানুয়ারি মাসে। টানা ছয় বছর এই অকাট্য চ্যালেঞ্জ পার করে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বিল্ডিং টি ব্যবহার করার উপযুক্ত হিসেবে উদ্ভাবন করা হয়। নির্মাণ চলাকালীন এর নাম ছিল বুর্জ দুবাই। কিন্তু উদ্ভাবন করার সময় তত্কালীন শাসক -খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান – এর সম্মানে এর নাম রাখা হয় বুর্জ খলিফা বুর্জ খলিফার উচ্চতা হলো ২৭১৭ ফুট ) বিশাল এই ভবন নির্মাণে খরচ হয়েছে ( ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ও বেশি।
বুর্জ খলিফার নকশা করা হয়েছে একটি ফুলের ডিজাইনে যার নাম – হাইমেনোক্যালিস। বুর্জ খলিফার গঠন কাঠামো নিচের তলা থেকে উপরের তলার দৈর্ঘ্য কমে এসেছে ,যা এই হাইমেনোক্যালিস ফুল এর মতো। আর এই ভাবেই তৈরি হয়েছে বুর্জ খলিফা।
এছাড়াও রয়েছে বুর্জ খলিফার ৬ টি বিশ্বরেকর্ড। যেমন:
– এটি একটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিল্ডিং।
– এটি সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত উপস্থাপনা।
– এখানে আছে পৃথিবীর সবচাইতে বড় লিফট।
আরো অনেক কিছু আছে এই বৃহৎ এবং সুন্দরতম বিল্ডিং এ।
বুর্জ খলিফা সম্পর্কে আরো মনোমুগ্ধকর এবং রোমাঞ্চকর কিছু তথ্য।
পানি সরবরাহ পদ্ধতিঃ
বুর্জ খলিফার পুরো বিল্ডিং এর পানি ব্যবস্থা করা হয়েছে ১০০ কিলোমিটার পাইপ এর মাধ্যমে। যার মাধ্যমে প্রতিদিন ৯,৪৬,০০০ লিটার পানি Burj khalifa বিল্ডিং এ আশে। যা এখন পর্যন্ত অন্য কোন বিল্ডিং এ করা হইনি এবং এটি একটি বিশ্ব রেকর্ড। জরুরি অগ্নি ব্যবস্থার জন্য আলাদা একটি পাইপ আছে, যার পাইপ আছে ২১৩ কিলোমিটার। এবং ৩৪ কিলোমিটার পাইপ আছে বিল্ডিং কে ঠাণ্ডা রাখার জন্য।
জানালা পরিষ্কারকরনঃ
Burj khalifa মোট জানালা আছে ২৪,৩৪৮ টি। আর এই কাচ ধোয়ার জন্য রয়েছে ৩ টি ট্রাক প্রতিটিতে একটি (৩৩,০০ পাউন্ড ) এর বাকেট মেশিন। বিল্ডিং এর উপরের অংশ এক দল কর্মী পরিষ্কার এর কাজ করে। এবং পুরো বিল্ডিং পরিষ্কার করার জন্য যখন সকল ইউনিট কাজ করে তখন ৩৬ জন কর্মীর ৪ মাস সময় লাগে। সবার মনে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে এতো বড় বিল্ডিং ভুমিকম্পনে ভেঙে যাবে কি নাহ? বুর্জ খলিফা বিল্ডিং টি নকশা করা হয়েছে সব দিক চিন্তা অ বিশ্লেষণ কয়ে, প্রবল ভুমিকম্পে বিল্ডিং এর কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আর বিল্ডিং টিতে সাধারন কোনো কনক্রিট ব্যাবহার করা হইনি। অনেক ধরনের কেমিক্যাল এর মিশ্রণে তৈরি করা এই কনক্রিট।